সাত আসমান হাঁটি চার পায়
তবু মেলে না মজুরি ‘আটাশ পা’,
আমার হাল বাওয়া– জোদ্দারের ধান,
আর এক পা গেলেই মিলবে মোহর!
একদিন অন্ধ ষাঁড় তাকায়,
হিসাবের খেরোখাতায় হালখাতার হয় প্রয়োজন।
আটাশ পায়ের পদধূলি,
গোধূলি এলেই হবে, সমাপন।
দু’মুঠো ঘাসের জন্য বিরান মাঠ বলেছিলো,
“খুঁজে নাও, তোমার জমানো খড়।” বলেছিলো মনিব,
“জমা আছে হকের আমানত, জমা আছে সম্পদ।”
চাই গোধূলির সমস্ত ধুলোর হিসাব,
ফোলা পেটে আছে খিদের হুংকার।
মনিব, আজ আমার তিলে তিলে জমানো আটাশটি পা, কই…?
মানুষ মানুষের মনিব হয় না,
তবু কিছু কিছু মানুষ রাক্ষস হলে,
রাক্ষসের কেউ কেউ মনিব বনে যায়,
বলদই নয় মানুষও ছিঁড়ে খায়। কেন?
শীত কি গ্রীষ্ম নাই, রোদ কি বাদল নাই, তোমার জমিনে দিছি চাষ।
তোমার ফসল তোমার গাড়ি, কান্ধে আমার কেবল জোয়াল!
মাড়াই ফসল পক্ষীত খায়, খালি আমার মুখে দিছো ঠুলি,
ঠুলি আঁটা চোখ দেখে হাজারগুণ,
ফসলের গন্ধ যায় কব্বরেরও তলায়।
ঠাঁয় দাঁড়ায়ে রাজ্যের রোদ মাথায়, জোটেনি মাথাল
বর্ষায় গোহালে ভিজেছে কাক,
কেউ এসে মোছেনি গো আঁষাঢ়ের ষাঁড়।
কাঁচা ঘাস দান বিধাতার,
বোধ হয় সে ছাড়া আপন নেই কেউ আর।
আমার আপন লেজে কীট ও পতঙ্গের প্রতি প্রতিশোধ নেবো–
কেটেছো কাঁচির কোপে কিচ্ছু বলিনি।
আমিতো বেসেছি ভালো ‘আমার মনিব’,
কাঁধের জোয়াল ভেবেছি আশীর্বাদ।
তয় ক্যান আমার জাবনায় পড়ে টান,
তয় আমার জাবনার খর ক্যান তোমার চালায়?
কোন দেশে আছে বর্গি এমন?
আর কতকাল আমার অন্নে পালিত হবে
আমারই রক্তচোষা?
অতঃপর অসহযোগ, ক্ষেতে হাল দেয়া বন্ধ,
ফসলের গাড়ি টানবো না,
চলবে না শুকনো-ধান নাড়া, মাড়াই হবে না ধান,
এ আমার চূড়ান্ত অসহযোগ।
ছেড়ে দিয়ে দানা পানি, অনশন আমার প্রতিবাদ,
অনশন আমরণ অনশন।
চার হাটু গেড়ে বসে থাকবো ঠাঁ ঠাঁ রোদে,
এ আমার অবস্থান ধর্মঘট।
মাঝে মাঝে শ্লোগানও তুলি
ভিক্ষা কে চায় মনিব ন্যায্য পাওনা দ্যাও…
আমার মিছিলে দিলো নাতো যোগ কাঙ্খিত বলদেরা।
আমার অসহযোগ আছড়ে পড়ে
আমারই পিঠে, পুরস্কার আর ন্যায্য হিসাব
নাঙলা নড়ির বাড়িতে গোনে মালিক।
“পাজি বলদ, তোকে আজ এমন শিক্ষা দেবো,
দুষ্টু বলদের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো” শুনলাম কানে।
এক ঢুঁশে উড়াব কলিজা,
তেড়ে যাই জোরে, না-খাওয়া গতরে পাই না বল,
দালাল আসে কেনাবেচা হয়,
“আমারে কেজি পাঁচেক দিয়ো মিয়া”
এইবার নেবো প্রতিশোধ, হাঁড়ের টুকরায় ভাঙবো দাঁত…
আফসোস ন্যায়-অন্যায় বলদেও বোঝে, বোঝে না মানুষ।
No Comments