অবহেলায় নদীর গায়ে লেপ্টে ছিল একতাল মাটি,
ভেজে কি শুকোয়! কেউ তার একাধিক দুখের
নেয়নি খবর।
একদা নদীর গা থেকে কুমোর নিলো কেটে।
পায়েতে মাড়িয়ে দিলো পিষে।
আকাশ সমান উঁচু থেকে ফেলে, আছড়ে,
টেনে ছিঁড়ে, হাঁচড়েপাঁচড়ে, করেছিল
একবার নরম তো একবার শক্ত চাঙর।
হঠাৎ বসিয়ে দিলো কুমোর চাকায়,
বনবন ঘুরল চাকাটা, বনবন ঘুরল মাথাটা।
এত করেও সাধ তার মিটল না-
ফেলেছিল ঠা ঠা রোদে।
রোদ থেকে গনগনে আগুন আগুনে।
শরীরটা জ্বলে গেল;
পুড়ে হলো লাল; আহাটুকু বলল না কেউ!
নতুন অচেনা নাম রাখা হলো। ‘কলসি’!
দুঃখের চাপে হারালো সে পুরোনো নামটাও ।
বলেছিল লোকে, ‘বাহ্ বেড়ে তো কলসিখানা।’
কলসি আসলো হাটে
মাথায় মাথায়, রাজ সম্মানে ।
হাট শুধু হাট নয়, হাট যেনো কলসির কসাইখানা!
এখানে সবাই কলসি পরখ করে। চাপড়ায়!
ছেলে-ছোকরারা, বুড়ো-হাবড়ারা, মেয়ে-ছেলেরা থাপড়ায়!
কি জোদ্দার, কি চাঁড়াল, কি মুচি, কি ডোম,
ভদ্দরনোকেরাও এখানে সমান চাপড়ায়!
রোদ-বৃষ্টি, পা-পাড়ানি, চরকি ঘুরান সহ্য হয় সব,
বেহদ্দের চড় কি চাপড় সহ্য হয় না।
‘দুর মিঞা- ফাটা তো! পাছা কালো!
বাইছা আনবা না হাটে!’ তারপর ?
যে বোঝার বুঝে নিক, বুঝে নিক যার যা বোঝার-
অযথা বোঝার দায় নেই কারো।
বৃষ্টিতে ভেজা, রোদে পোড়া দুখী সে কলস:
কেউ তার নেয় না খবর।
মাটি ছিলি ভালো ছিলি;
মাটি হয়ে মিশে যেতে তোর লাগবে যে হাজার বছর।
এছাড়াও দেখুন: নেমন্তন্ন
No Comments