একফালি করুণ-সুর আছে,
বড় চেনা সেতারের সুর আমার, জীবনের প্রথম সঞ্চয়,
গাঁথা– ব্যথা হয়ে রয়ে গেছে বুকে।
সে ছিল নিতান্ত মলিন–
বাজারের ব্যাগে তেল মশলার সাথে, একই থলেতে
এসেছিলো; মাখামাখি হয়ে আনন্দ আনন্দ বলে এসেছিলো।
সে আমার প্রথম বাঁধাই করা কবিতার খাতা।
ডায়রিটা হাতে নিয়ে
মহানন্দে বলেছিলাম ‘বাবা, তুমি এতো ভালো কেন!’
বাবা, তোমার কি মনে আছে?
এখানে ‘হয়তো’ কথাটির অকারণ টানাটানি।
সেখানে তো কিছুই ছিলো না আমার– ক’টা কবিতা,
একটা শোনা গল্প– স্মৃতিচারণ করে লেখা
বড় বড় হরফ–তারিখগুলো লেখা হয়নি…
সঠিক করে বলতেও পারবো না কখন এবং কোথায়
জমে উঠেছিলো প্রথম লেখা-লেখা খেলা,
প্রথম কবিতা–স্পষ্ট ও একান্ত আমার– ছেলেবেলা।
কানায় কানায় তেল মসলায় ডুুবে থেকে লেখাগুলো হয়েছিলো
একশতবার ধোয়া কোঁচকানো নোটের মতই।
ভাবতেও হাসি পায়, ওটা নাকি আবার কাব্য!
যদিও অতোটাও গভীর করে ভাবিনি। তবু, তার কাছে
আমার–অনেক ঋণ, সে আমার হাতেখড়ি চক!
হাতেখড়ি লেখা ও পড়ার, হাতেখড়ি জীবনের, হাতেখড়ি কবিতার, হাতেখড়ি সময় হারিয়ে ফেলার।
তারপর বহুবারই দেখেছি–অমন বাঁধাই করা
শত পৃষ্ঠার হে অমর বন্ধু–তোমায়।
আমার শৈশব, হারানো অনেক দিন, আমি পারিনি ভুলতে আজো।
কেউ কি পেরেছে তা?
মায়ের আদরে, বাবার ছায়ায়–কাটানো সময়,
হাত ধরা-ধরি, গোল্লাছুট, আয়েশী দুপর,
গল্পশোনা-ক্ষণ, দিদিমার সাথে যুদ্ধ, স্মৃতি,
ভালোবাসাময় স্বপ্নভরা চোখ…
কে আর ফিরিয়ে দেবে?
যতোবার চোখ মেলে পড়েছি কবিতা, ততোবার
ক্যানভাসে ভেসেছে তপতী,
শুনেছি সমুদ্রের মতো সময়ের গর্জন। বিস্ময়ে
বলেছি যে কতোবার, তুমি তো ডায়রি মাত্র নও;
নতুবা, এখনকার এই এত-এত ডায়রির পাতা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে নৌকা বানাতেও একটুও কষ্ট হচ্ছে না কেন?
ছেলেবেলা তোমাকে যে কতো বছর দেখিনা আমি! পারো না কি একবার উঁকি দিয়ে দেখা দিয়ে যেতে, বুকের ভেতর অনেক পাথর জমে আছে।
No Comments