মহামতি ফ্রয়েড,
বেশিরভাগ মানুষই চিন্তাশক্তিকে নির্বাসনে দিয়েছেন,
কেবল নির্মম শুষ্ক বিচারক তারা এখন।
মহামতি আপনি, নিষিদ্ধ ইচ্ছার কথা বললেন।
হ্যাঁ, অস্বীকার করি না, তবু
গলা টিপে বাসনাকে রুদ্ধ করা, যায় কি?
সমাজ-সংসারের নিয়মে, যা কিছু অননুমোদিত,
সকলে তাকেই নিষিদ্ধ বলেই জানে ।
তবুও আকাঙ্খা তোমাকে কি থাকতে নেই?
অপ্রাপ্তি তুমি কি সত্য নও ?
অবচেতন যদি বিপরীত হয়ে,
বাস্তবকে স্বপ্নে বদলে দিয়ে,
কিছুটা সময় স্বস্তি দিয়েই থাকে,
তবে কেন তাকে বিকৃতিই বলবেন
মহামান্য ফ্রয়েড।
স্বপ্নের প্রতিটি চরিত্র এখন আমি নিজে
অথবা নিজের মধ্যে ধারণ করে আছি,
হ্যাঁ, সে আসেনি অথবা আসার প্রশ্নই আসে না
কারণ, আপনারা তাকে নিষিদ্ধ বলেছেন।
তাছাড়াও ছি ছি হুংকার আছে,
সম্মানহানির ভয় আছে,
প্রতিকূলতা আছে, ধুলো, ময়লা, বিগলিত শব, সব আছে।
এসব বাস্তবে মানলেও স্বপ্নে কেন মানবো,
বলুন, বলতে পারেন, মহামতি!
হয়তো বাস্তবে আমিই চাই না
তার সাথে আবারো মিত্রতা হোক!
চীনের প্রাচীর রেখেছি বলয়ে গণ্ডিবদ্ধ জীবনে আমার ।
তবু তার পড়বেই ছায়া,
স্বপ্নে তো বটেই।
অবচেতনের সেন্সর আমি জেগে নিয়ন্ত্রণ করি না,
অতএব সে যদি আসে আসুক।
কেবল স্বপ্নই মিত্রকে মিত্র বলে,
ভুল নেই বিকৃতি নেই, একটুও না।
আজ কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না মহামতি,
কেবলই ক্ষমা করবেন।
মহামতি ফ্রয়েড,
ভুল আর স্মৃতিভ্রম দু’টোর কোনোটাই কি অপরাধ?
স্বপ্নের অস্বাভাবিকতা সে কি শারীরিক না মনস্তাত্ত্বিক?
তা নিয়ে অনর্থক বিতর্ক কেন মহামতি?
অনুভূতিগুলো না বলে উদ্দীপক বলাই যখন ভালো।
সে বরাবর আসে পরিবেশ, শরীর আর চিন্তা থেকে।
মন তো চিন্তারই সমষ্টি মাত্র।
এককেন্দ্রিক চিন্তার বিক্ষিপ্ত টুকরোগুলো
ছড়িয়েছে অবচেতনেও।
স্বপ্নের বিক্ষিপ্ত প্রতিটি অধ্যায় ব্যাখ্যাযোগ্য যখন,
তবে কেন মহামতি, কেন এ বিকৃতি খোঁজা?
কেবল শিশু মনেই বিকৃতি নেই।
সামান্য সময়ের জন্য যখন সে আসে,
আনন্দ আসে, সুখ আসে।
বিশ্বাস করুন মহামতি, স্বপ্ন বিকৃতির সুখ এ নয়,
এবং সকলের সুখ একই রকম নয়।
সে আসুক, না আসুক,
আমার হোক, না হোক,
তবু পরিচিত ঘ্রাণ ভালোবেসে বাতাস বয়ে চলে
অন্তরের দিকে।
হে মহামতি,
এ সুখ কেড়ে নেবার অধিকার কারো নেই।
আরো পড়ুন: রাতদুপরের পঙ্ক্তিরা
2 Comments