ফ্রয়েডের প্রতি

ফ্রয়েডের প্রতি

সকল কবিতা By 8 months ago 2 Comments
5
(1)

মহামতি ফ্রয়েড,
বেশিরভাগ মানুষই চিন্তাশক্তিকে নির্বাসনে দিয়েছেন,
কেবল নির্মম শুষ্ক বিচারক তারা এখন।
মহামতি আপনি, নিষিদ্ধ ইচ্ছার কথা বললেন।
হ্যাঁ, অস্বীকার করি না, তবু
গলা টিপে বাসনাকে রুদ্ধ করা, যায় কি?
সমাজ-সংসারের নিয়মে, যা কিছু অননুমোদিত,
সকলে তাকেই নিষিদ্ধ বলেই জানে ।

তবুও আকাঙ্খা তোমাকে কি থাকতে নেই?
অপ্রাপ্তি তুমি কি সত্য নও ?
অবচেতন যদি বিপরীত হয়ে,
বাস্তবকে স্বপ্নে বদলে দিয়ে,
কিছুটা সময় স্বস্তি দিয়েই থাকে,
তবে কেন তাকে বিকৃতিই বলবেন
মহামান্য ফ্রয়েড।

স্বপ্নের প্রতিটি চরিত্র এখন আমি নিজে
অথবা নিজের মধ্যে ধারণ করে আছি,
হ্যাঁ, সে আসেনি অথবা আসার প্রশ্নই আসে না
কারণ, আপনারা তাকে নিষিদ্ধ বলেছেন।
তাছাড়াও ছি ছি হুংকার আছে,
সম্মানহানির ভয় আছে,
প্রতিকূলতা আছে, ধুলো, ময়লা, বিগলিত শব, সব আছে।
এসব বাস্তবে মানলেও স্বপ্নে কেন মানবো,
বলুন, বলতে পারেন, মহামতি!

হয়তো বাস্তবে আমিই চাই না
তার সাথে আবারো মিত্রতা হোক!
চীনের প্রাচীর রেখেছি বলয়ে গণ্ডিবদ্ধ জীবনে আমার ।
তবু তার পড়বেই ছায়া,
স্বপ্নে তো বটেই।

অবচেতনের সেন্সর আমি জেগে নিয়ন্ত্রণ করি না,
অতএব সে যদি আসে আসুক।
কেবল স্বপ্নই মিত্রকে মিত্র বলে,
ভুল নেই বিকৃতি নেই, একটুও না।
আজ কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না মহামতি,
কেবলই ক্ষমা করবেন।

মহামতি ফ্রয়েড,
ভুল আর স্মৃতিভ্রম দু’টোর কোনোটাই কি অপরাধ?
স্বপ্নের অস্বাভাবিকতা সে কি শারীরিক না মনস্তাত্ত্বিক?
তা নিয়ে অনর্থক বিতর্ক কেন মহামতি?
অনুভূতিগুলো না বলে উদ্দীপক বলাই যখন ভালো।
সে বরাবর আসে পরিবেশ, শরীর আর চিন্তা থেকে।
মন তো চিন্তারই সমষ্টি মাত্র।
এককেন্দ্রিক চিন্তার বিক্ষিপ্ত টুকরোগুলো
ছড়িয়েছে অবচেতনেও।
স্বপ্নের বিক্ষিপ্ত প্রতিটি অধ্যায় ব্যাখ্যাযোগ্য যখন,
তবে কেন মহামতি, কেন এ বিকৃতি খোঁজা?

কেবল শিশু মনেই বিকৃতি নেই।
সামান্য সময়ের জন্য যখন সে আসে,
আনন্দ আসে, সুখ আসে।
বিশ্বাস করুন মহামতি, স্বপ্ন বিকৃতির সুখ এ নয়,
এবং সকলের সুখ একই রকম নয়।
সে আসুক, না আসুক,
আমার হোক, না হোক,
তবু পরিচিত ঘ্রাণ ভালোবেসে বাতাস বয়ে চলে
অন্তরের দিকে।

হে মহামতি,
এ সুখ কেড়ে নেবার অধিকার কারো নেই।

আরো পড়ুন: রাতদুপরের পঙ্ক্তিরা

বিজ্ঞাপন

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 1

No votes so far! Be the first to rate this post.

Author

তন্ময় সাহা(১৯৮৩)–জন্ম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে খ্যাত কুষ্টিয়া জেলায়, কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠা, শৈশব কেটেছে, কৈশোরেও তার কুষ্টিয়া আর গড়াই নদীর মাখামাখি। তারপর লেখাপড়া ও কর্মসূত্রে বহুদিন ধরে খুলনায় বসবাস। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি এন্ড জিনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক, বায়োটেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা হতে। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সিকিউটিভ এমবিএ (এইচ আর এম) সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও তিনি ‘দি ফ্লেচার স্কুল অফ ল’ এন্ড ডিপ্লোম্যাসি; টাফ্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ডিজিটাল ফিন্যান্স প্যাকটিশনার হিসাবে সনদপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি উপপরিচালক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, খুলনায় কর্মরত আছেন। লেখালিখি চলেছে বিক্ষিপ্তভাবে, শখে, আদিষ্ট বা অনুরুদ্ধ হলে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যুক্ত ছিলেন নাট্যদল ‘থিয়েটার নিপূণ’ এবং বিজ্ঞান পত্রিকা ‘বায়োটকের’ সাথে। বই, বাংলা সাহিত্য হলো তার ভালোবাসা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া প্রতিযোগীতায় স্কুল পর্যায়ে পাওয়া সার্টিফিকেট আর উপহারে পাওয়া বইগুলোকে আজও অতি যত্নে রেখেছেন, নিজস্ব বুকসেলফে। মুলতঃ কবিতা লেখার শখ, টুকটাক গদ্য লেখারও চেষ্টা চলে। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতাগুলি সহ সোস্যালমিডিয়া, টুকরো কাগজ আর ডাইরিগুলোর পাতা থেকে অদুর অতীতে লেখা নিজের পছন্দের বেশ কিছু কবিতা মলাটবন্দী করে, আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন হোরাসের চোখ, বিবিধ ঘোড়সওয়ার ও কালো মেম কাব্যগ্রন্থে।

2 Comments

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!