মনি’দা মরে গেলো

সকল কবিতা By 11 months ago No Comments
5
(1)

পারুল বলল, “দাদা, মনি’দা নেই।”
“কোথায় গেছে মনি’দা: ঢাকা, কোলকাতা নাকি প্যারিস?”
“সে কথা নয় দাদা, মনি’দা আর নেই!”
চোখ তুলে তাকালাম। মনি’দা আমাদের মনি’দা,
যার মুখে গল্প না শুনলে ঘুম আসতো না,
গান না শুনলে চাঁদমাখা রাত ফ্যাকাশে মনে হতো,
যার জামরুল ডালের শাসন না হলে হয়তো
আমাদের পড়াশুনো শিকেয় তোলা থাকতো আজও,
মনি’দা আমাদের সেই মনি’দা, আর নেই!

আম কাঠ চেরাই এর শব্দ ভাসছে বাতাসে,
বাঁশ চেরাইয়ের ব্যস্ততা টের পাচ্ছি।
পারুল একবার তিলক নিয়ে গেলো,
কে যেন জোরে চিৎকার করে বললো,”তুলশী পাতা, তুলো।”

শ্মশান, এখান থেকে মাইল খানেক দূর।
পারুল বলল, “দাদা যাবিনে?”
আমি ভাবলাম যাবো, ভিডিও কনফারেন্সটা শেষ হলেই যাবো,
মনিদা ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়াও, এতোটা সময় তো সইলে!
বিজনেজ কন্ট্রাকটা আজই পাবার কথা।
মৃতেরা কথা শোনে না, তাদের কেবল চলে যাবার তাড়া!
মনি’দা, তুমি কি রাগ করছো?

ব্যাংক থেকে দু’লাখ টাকা আজকের মধ্যে না তুললেই নয়।
টাকাটা না হলে শ্রাবণীর সখের কার্পেট আর ল্যাপটপটা হয়তো
আর কেনাই হবে না।
কতো দিনের বায়না বলতো ওর!
মনি’দা  শ্রাবন্তীকে তো চেনো,
তোমার ভাতৃবধূ, বড্ড বেশি অভিমানী !

আজ আবার জাগ্রতর আসার কথা,
ওর এক পছন্দের পাত্রীর সাথে পরিচয় পর্ব,
মেয়েটাও বেশ, মানবে, মানিকজোড়।
মনি’দা, ব্যস্ত সময়ে হুটহাট করে মরে যেতে হয় না।

মরলে কেমন লাগে মনি’দা, হালকা না ভারী,
যেহেতু মরলে আত্মা বেড়িয়ে যায়, হালকা লাগারই কথা।
তুমি যা ভারী, বাব্বা!
একটু রসিকতা করলাম; মনি’দা, তুমি কিছু মনে করো না।

আজ আমাকে
জয়ের জন্মদিনের কেকের অর্ডারটা দিতেই হবে।
পার্টিতে কতো গণ্যমান্যের সমাবেশ হবে, বলোতো!
আর মাত্র তো দু’টো দিন আছে হাতে।
আফটার অল প্রেজটিস এন্ড বিজনেস ইস্যু, ইয়্যা!
ভুলেই গিয়েছিলাম শ্রাবন্তীর বসের পারফিউমটা,
কেনাই হয়নি, অফিস মেটার বলে কথা!
জীবনের এই ব্যস্ত সময়, বড় অসময়ে মরলে তুমি দাদা!

এবারে মায়ের বাৎসরিক উৎসবটা জমকালো করে করবো,
লোকে জানুক, সে কার মা ছিলো ?
মা একসময় তোমাকে আর আমাকে
একসাথে ভাত মেখে খাওয়াতো।
হ্যাঁ, তোমার জন্য অবশ্যই বড় একটা স্মরণসভা করবো
তোমায় বড্ড ভালোবাসি মনি’দা।

মনি’দা তুমি যেন কখন মরলে, কালবেলা ছিলো নাকি?
মনে পড়েছে,‘গতকাল দিবাগত রাত ন’টায়’, পারুল বলেছিলো বটে!
রাত এখন বারোটা ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।
আজকাল অফিসের কাজ বাসায়ও করতে হয়,
কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম না হলে আর চলছে না।

পারুল বলল,
“দাদা সকাল ছ’টার দিকে মনি’দার দাহ হয়ে গেছে।”
শুনলাম।
মনি’দা স্নেহের প্রতিদান আমি দেবোই দেবো।
মনুষ্যত্ব এখনো মরেনি।
দেখো বড় স্মরণ সভায়,
তোমায় স্মরণ করে ঠিকই লম্বা ভাষণ দেবো।

আরও পড়ুন – >>> আকাশ কোথায় থুই

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 1

No votes so far! Be the first to rate this post.

Author

তন্ময় সাহা(১৯৮৩)–জন্ম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে খ্যাত কুষ্টিয়া জেলায়, কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠা, শৈশব কেটেছে, কৈশোরেও তার কুষ্টিয়া আর গড়াই নদীর মাখামাখি। তারপর লেখাপড়া ও কর্মসূত্রে বহুদিন ধরে খুলনায় বসবাস। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি এন্ড জিনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক, বায়োটেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা হতে। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সিকিউটিভ এমবিএ (এইচ আর এম) সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও তিনি ‘দি ফ্লেচার স্কুল অফ ল’ এন্ড ডিপ্লোম্যাসি; টাফ্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ডিজিটাল ফিন্যান্স প্যাকটিশনার হিসাবে সনদপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি উপপরিচালক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, খুলনায় কর্মরত আছেন। লেখালিখি চলেছে বিক্ষিপ্তভাবে, শখে, আদিষ্ট বা অনুরুদ্ধ হলে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যুক্ত ছিলেন নাট্যদল ‘থিয়েটার নিপূণ’ এবং বিজ্ঞান পত্রিকা ‘বায়োটকের’ সাথে। বই, বাংলা সাহিত্য হলো তার ভালোবাসা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া প্রতিযোগীতায় স্কুল পর্যায়ে পাওয়া সার্টিফিকেট আর উপহারে পাওয়া বইগুলোকে আজও অতি যত্নে রেখেছেন, নিজস্ব বুকসেলফে। মুলতঃ কবিতা লেখার শখ, টুকটাক গদ্য লেখারও চেষ্টা চলে। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতাগুলি সহ সোস্যালমিডিয়া, টুকরো কাগজ আর ডাইরিগুলোর পাতা থেকে অদুর অতীতে লেখা নিজের পছন্দের বেশ কিছু কবিতা মলাটবন্দী করে, আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন হোরাসের চোখ, বিবিধ ঘোড়সওয়ার ও কালো মেম কাব্যগ্রন্থে।

No Comments

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!