স্বর্ণালির বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই।
ত্রিশ বা পঁচিশ, নিজেকে কখনো কখনো
আঠারোর তন্বী তরুণী ভাবতেও বেশ লাগে ওর।
ছিপছিপে কটি, আপেল রঙের মেয়েটার মতো পূর্ণ যুবতী সে
(ঠিক যেমন প্রিয় জহির রায়হান ছোটগল্পে রুনাকে এঁকেছিলেন)।
বয়সের চাপ কমে বাড়ে। কখনো উচ্চচাপ কখনো নিম্নচাপ হয়।
স্বর্ণালি, কখনো কল্পনায় আকাশ ছোঁয় তো কখনো পাতাল।
ওতে আনন্দ-বিষাদ, রোদ কি বৃষ্টি বিশেষ কিছুই যে নেই,
তা তাকে বহুবার বহুজন বলেছেন।
তবু সে ভেবে চলে, ‘ত্রিশ, বিশ, আঠারো…’।
ভ্রু-পেইন্ট, আই-লাইনার, বাহারি লিপিস্টিক,
ফেস-পাউডার, মাশকারা, হোয়াইটেনার,
বেসন, হলুদ আর একটু মসুর ডাল
এই তার রূপের সম্বল।
অনেকেই বলেছেন ভেষজের গুণাগুণ নাকি কেমিক্যাল থেকেও
অনেক অনেক বেশি। তার উপর, ওর অমন টোলপড়া গালের,
কোঁকড়া চুলের প্রশংসা-কেনোইবা ওকে ভাসাবে না বলুন!
ইদানীং কেন জানি না
অনেকেই মুখ ফুটে প্রশংসাটা করছেন না।
প্রায়শই মন তার খারাপ খারাপ হয়।
খোলা আকাশের নিচে না হোক, বদ্ধ ঘরেই না হয়
আউড়ে কবিতার কটা লাইন স্বর্ণালি, নাটোরের বনলতা হবে।
বলো দেখি বিউটিফুল, কখন তুমি সবচেয়ে বেশি সুন্দরী ছিলে?
আঠারো নাকি পঁচিশে?
ড্রেসিং-টেবিলটার আয়নায় চামড়ার বলিরেখা দেখে,
কপালের ভাঁজ দেখতে দেখতে এমনকি একান্ত আড়ালে
সন্তান জন্মের দাগ দেখে-এ প্রশ্নের
উত্তর দিতে পারা সত্যি কঠিন। বড্ড বেশি শক্ত!
‘আঠারোতে প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা হয়নি,
পঁচিশে ছিল না ফুটফুটে দেবশিশুরা।’
হঠাৎ, এরকম ভাবা মাত্রই আত্মার আমোদে স্বর্ণালি
এতদিনে যেন ঠিকঠাক সৌন্দর্যের নাগাল পেয়ে গেলো!
এই এতক্ষণে জানতে পেরেছে সে,
‘এত কিছু আছে যার ড্রেসিংটেবিলটা তার না হলেও চলেবে।’
এছাড়াও দেখুন: প্রজাপতি জন্ম
No Comments