জমিদার কত্তার পুতের বে’, নেমন্তন্ন গো দাদা, নেমন্তন্ন।
প্রেজারা মেলা খুশি, বে’ বলে কতা।
আমি কি আর না যায়ে পারি গো দাদা, না যায়ে পারি ?
কত্তার পুত, ছোট কত্তা বলে কতা!
হাটের মইধ্যে ঢেড়া পিটায়ে নেমন্তন্ন!
কী তার বাহার! কী তার চটক, বাবা গো বাবা!
আমি কি আর না যায়ে পারি!
বাপের সাথে পুতেরও তো যাওয়া লাগে, নাকি, কও?
পেন্নাম অন্নদাতা? ছাওয়াল আমার মনিব চেনবে না!
কী করে হয়, কি-ই করে হয়? কও?
ভোরের নদী গো! বাপে পুতে চুবানি দিয়ে, বাবুর বাড়ির
ফাই-ফরমাস খাইটে, ঘাইমে-নায়ে-চুবায়ে সবে উঠিছি-
খাজেনদারের হাঁক,
-যা পাতা কাইটে নিয়ে আয়। বাইরে আমগাছের পাশে
গাদা মাইরে বইসে পর।
পাতা কাইটে ফিরে যখন সবে বসিছি মনে প’লো,
‘পাতা ধুলাম না তো!’ কি ভুলো মন রে বাবা!
-দাদাগো এট্টু জল দিবা? পাতা ধুতাম!
-দেখো না, বাবু আবার পাতা ধোয়! যা যা, নদীর জলে
চুবায়ে নিয়ে আয়, নয় তো মুছে নে, ডলা দে পাছায়।
ছাওয়াল আমার দৌড়োয় ভালো। এক্কেরে হরিণীর লাহান-
বাপেরে কি ময়লা পাতায় খাতি দেয়!
ভাত আর ডাল দিয়ে ভাইসে গেল পাতা; মাছের ঝোলে
ভাঙ্গা মাছের গন্ধও পালাম!
বাবা, মিষ্টি দিবি নে?
দিলি তো আগেই দিতো রে, বাপ!
নিজ চোক্ষে দেখলাম ছানার রসা, পটল ভাজা,
কচি পাঁঠা গড়াগড়ি খাচ্ছে ঝোলে অম্বলে!
-কত্তা কিন্তু খুব রাগী, হ্যাঁ! ফেলবিনে যেখানে সেখানে;
পাতা তুলে নিয়ে ভাগাড়ে যা।
কত্তাগের নাকি ভূমি দান করতি হয়। নিয়ম! দানের ভূমির
আগাছা ময়লা ছাফ, আমাগেরই করতি হয়! সেডাও নিয়ম!
ছোট কত্তার বে’, মনিব বলে কতা! মনিব বলে কতা-
অখ্যাতি তো হতি দেয়া যায় না!
-বাপ, এই খাতি আলাম!
-চুপ! চুপ! ও কতা কতি নেই বাপ।
না আলি হবি? মাতা গুনতি যে! চামড়ার ঢোল
ঢাকের কাঠি ছাড়াই কত্তারা বাজায় রে বাপ।
পাতা হাতে বাপে-পুতে ভাগাড়ে চললাম-
ছোট কত্তার ছেলে হলি পরে
আমার ব্যাটার মনিব হবি যে! ভাবতিই ভালো লাগে!
সুখ সুখ লাগে গো দাদা, সুখ সুখ লাগে!
এছাড়াও দেখুন: আইজুদ্দির স্বপ্নের গরু
No Comments