আমাদের ছাপোষা পিতা; কেরানি ছিলেন,
অথচ তার বুকের ভেতর কী অতল জীবনের বাস!
আমাদের পিতা, আমাদের পৃথিবীর অ্যাটলাস।
বসতেন, অফিসের নিচুতলার চেয়ারগুলোর একটাতে।
হোমরা—চোমরা বাবু সাহেবেরা কখনো তাকে
তুইতোকারি করেছেন বলে শুনিনি!
কিন্তু মন খারাপের কারণ যায়নি জানা, অনেকবার।
পিতার সুনিপুণ শিল্পকর্ম দেখেছি।
পিতার গতিময় হাতে ভালোবাসার টাইপ—রাইটারÑ
চেয়ে থাকতাম বিমুগ্ধ নয়নে, রাজ্যের বিস্ময়ে।
শব্দটা অর্কেস্ট্রার মতো, হৃদয়ে গেঁথে আছে আজো।
তার লেখা প্রতি পাতা, যেনো তার এক একটি সন্তান,
এক একজন আমি।
শর্টহ্যান্ডে দক্ষ পিতা বাড়ি ফিরতেন; রাত দশটায়।
মা চেয়ে থাকতেন পথের দিকে,
কোনো কোনো দিন আমরাও।
মুঠোফোন তখনও আসেনি,
বাবার তাই বলা হতো না, “খেয়ে নিয়ো তোমরা’’…।
মুখ ফুটে বলেননি কখনোই,
“আমার সুবিধাবাদী বাবুসাহেবদের
গোলামী করতে করতে ক্লান্ত আমি।”
তোমাদের ভালোবাসবার শক্তিটকু নিংড়ে নেবার আগে,
ছাড় পাবার নিয়ম আমার নেই।
সেই থেকে অধস্তন শব্দটা বুকে বেঁধে, কাঁটার মতোন।
অতো যদি মুরোদ থাকে…
না বাবা, তোমার গোনা পয়সার জীবন এখন আমার!
মুরোদ হয়নি আমারো।
একই রকম হাহাকার এখন আমারো বুকের মধ্যে!
আমি আর বাবা মিলেমিশে একাকার এখন,
আমাদের যৌথ পঁয়ত্রিশ বছর পর।
তুমি বলতে, “ভালো করে পড় বাপ।”
বিশ্বাস কর বাবা তোমার ঘামের দাম,
এক ফেঁাটা মাটিতে ফেলিনি আমরা,
তোমার সন্তানেরা এখনো পায়
অস্তিত্বের ঘ্রাণ, তোমার শ্রমিক ঘামে।
আচ্ছা বাবা, “মানুষ হওয়া মানে কি?”
অনেকেই বলেছিলো দিন বদলায়,
দেখলাম দিন শুধুই শেষ হয় ।
তখনও বুর্জোয়া ছিলো আজও…
তখনও আত্মম্ভরী ছিলো আজও…
তখনও অমানুষ ছিলো আজও
একইরকম অমানুষ কিলবিল করে সাপের মতোন।
তখনও তুমি মধ্যাহ্নভোজে শুধুমাত্র ডিম
দেখে বলতে, “পুষ্টিকর”! আমিও তেমন।
তখনও তুমি আর মা হাতপাখা আর জলপটি নিয়ে…
আমিও তেমন।
আমি বলতাম, “জ্বর তো নেই দেখো।”
তুমি কপালে হাত রাখা মাত্র,
কী এক অনির্বচনীয় নিরাপত্তার চাদর পেতাম,
এইতো আমার বাবা আছে পাশে, আমাদের বাবা।
প্রিয় বাবা,
“আমাদের কক্ষণো অসুস্থ হতে নেই,
অকারণ অসু¯তার বিলাসিতা আমাদের মানায় না।
আমাদের মৃত্যু না—হোক,
শেষকৃত্যের খরচ এখনো আমি,
জমাতে পারিনি।”
Read More – >>> ভালো থাকা সুখ
No Comments