আমাদের পৃথিবীর অ্যাটলাস

সকল কবিতা By 9 months ago No Comments
5
(1)

আমাদের ছাপোষা পিতা; কেরানি ছিলেন,
অথচ তার বুকের ভেতর কী অতল জীবনের বাস!
আমাদের পিতা, আমাদের পৃথিবীর অ্যাটলাস।

বসতেন, অফিসের নিচুতলার চেয়ারগুলোর একটাতে।
হোমরা—চোমরা বাবু সাহেবেরা কখনো তাকে
তুইতোকারি করেছেন বলে শুনিনি!
কিন্তু মন খারাপের কারণ যায়নি জানা, অনেকবার।

পিতার সুনিপুণ শিল্পকর্ম দেখেছি।
পিতার গতিময় হাতে ভালোবাসার টাইপ—রাইটারÑ
চেয়ে থাকতাম বিমুগ্ধ নয়নে, রাজ্যের বিস্ময়ে।
শব্দটা অর্কেস্ট্রার মতো, হৃদয়ে গেঁথে আছে আজো।
তার লেখা প্রতি পাতা, যেনো তার এক একটি সন্তান,
এক একজন আমি।

শর্টহ্যান্ডে দক্ষ পিতা বাড়ি ফিরতেন; রাত দশটায়।
মা চেয়ে থাকতেন পথের দিকে,
কোনো কোনো দিন আমরাও।
মুঠোফোন তখনও আসেনি,
বাবার তাই বলা হতো না, “খেয়ে নিয়ো তোমরা’’…।

মুখ ফুটে বলেননি কখনোই,
“আমার সুবিধাবাদী বাবুসাহেবদের
গোলামী করতে করতে ক্লান্ত আমি।”
তোমাদের ভালোবাসবার শক্তিটকু নিংড়ে নেবার আগে,
ছাড় পাবার নিয়ম আমার নেই।

সেই থেকে অধস্তন শব্দটা বুকে বেঁধে, কাঁটার মতোন।
অতো যদি মুরোদ থাকে…
না বাবা, তোমার গোনা পয়সার জীবন এখন আমার!
মুরোদ হয়নি আমারো।
একই রকম হাহাকার এখন আমারো বুকের মধ্যে!
আমি আর বাবা মিলেমিশে একাকার এখন,
আমাদের যৌথ পঁয়ত্রিশ বছর পর।

তুমি বলতে, “ভালো করে পড় বাপ।”
বিশ্বাস কর বাবা তোমার ঘামের দাম,
এক ফেঁাটা মাটিতে ফেলিনি আমরা,
তোমার সন্তানেরা এখনো পায়
অস্তিত্বের ঘ্রাণ, তোমার শ্রমিক ঘামে।

আচ্ছা বাবা, “মানুষ হওয়া মানে কি?”
অনেকেই বলেছিলো দিন বদলায়,
দেখলাম দিন শুধুই শেষ হয় ।
তখনও বুর্জোয়া ছিলো আজও…
তখনও আত্মম্ভরী ছিলো আজও…
তখনও অমানুষ ছিলো আজও
একইরকম অমানুষ কিলবিল করে সাপের মতোন।

তখনও তুমি মধ্যাহ্নভোজে শুধুমাত্র ডিম
দেখে বলতে, “পুষ্টিকর”! আমিও তেমন।
তখনও তুমি আর মা হাতপাখা আর জলপটি নিয়ে…
আমিও তেমন।
আমি বলতাম, “জ্বর তো নেই দেখো।”

তুমি কপালে হাত রাখা মাত্র,
কী এক অনির্বচনীয় নিরাপত্তার চাদর পেতাম,
এইতো আমার বাবা আছে পাশে, আমাদের বাবা।

প্রিয় বাবা,
“আমাদের কক্ষণো অসুস্থ হতে নেই,
অকারণ অসু¯তার বিলাসিতা আমাদের মানায় না।
আমাদের মৃত্যু না—হোক,
শেষকৃত্যের খরচ এখনো আমি,
জমাতে পারিনি।”

Read More – >>> ভালো থাকা সুখ

বিজ্ঞাপন

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 1

No votes so far! Be the first to rate this post.

Author

তন্ময় সাহা(১৯৮৩)–জন্ম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে খ্যাত কুষ্টিয়া জেলায়, কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠা, শৈশব কেটেছে, কৈশোরেও তার কুষ্টিয়া আর গড়াই নদীর মাখামাখি। তারপর লেখাপড়া ও কর্মসূত্রে বহুদিন ধরে খুলনায় বসবাস। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি এন্ড জিনেটিক ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক, বায়োটেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা হতে। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সিকিউটিভ এমবিএ (এইচ আর এম) সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও তিনি ‘দি ফ্লেচার স্কুল অফ ল’ এন্ড ডিপ্লোম্যাসি; টাফ্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ডিজিটাল ফিন্যান্স প্যাকটিশনার হিসাবে সনদপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি উপপরিচালক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, খুলনায় কর্মরত আছেন। লেখালিখি চলেছে বিক্ষিপ্তভাবে, শখে, আদিষ্ট বা অনুরুদ্ধ হলে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যুক্ত ছিলেন নাট্যদল ‘থিয়েটার নিপূণ’ এবং বিজ্ঞান পত্রিকা ‘বায়োটকের’ সাথে। বই, বাংলা সাহিত্য হলো তার ভালোবাসা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া প্রতিযোগীতায় স্কুল পর্যায়ে পাওয়া সার্টিফিকেট আর উপহারে পাওয়া বইগুলোকে আজও অতি যত্নে রেখেছেন, নিজস্ব বুকসেলফে। মুলতঃ কবিতা লেখার শখ, টুকটাক গদ্য লেখারও চেষ্টা চলে। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতাগুলি সহ সোস্যালমিডিয়া, টুকরো কাগজ আর ডাইরিগুলোর পাতা থেকে অদুর অতীতে লেখা নিজের পছন্দের বেশ কিছু কবিতা মলাটবন্দী করে, আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন হোরাসের চোখ, বিবিধ ঘোড়সওয়ার ও কালো মেম কাব্যগ্রন্থে।

No Comments

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!